কাজী নজরুল ইসলামের ধর্মবিশ্বাস কি ছিল?

আমাদের
অনেকেরই প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার কিছু লেখা পড়লে মনে হয় তিনি ছিলেন একজন
প্রকৃত মুসলমান, আবার কিছু লেখা পড়লে মনে হয় তিনি নাস্তিকতার দিকে ধাবিত
হয়েছিলেন। আসল ব্যাপারটা কি? উনি আসলে কি ছিলেন? মুসলিম নাকি কাফির? আশা করি এই
পোস্টের শেষদিকে এসে আমরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবো। কাজী নজরুল ইসলাম
বিয়ে করেছেন একজন হিন্দু নারীকে, সন্তানের নাম রেখেছেন নাস্তিক স্টাইলে (কৃষ্ণ
মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ, কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ), এছাড়াও কৃষ্ণ লীলার
উপর তিনি অসংখ্য শ্যামা সঙ্গীত লিখেছেন- এসব দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে তিনি একজন
নাস্তিক অথবা কাফির।
“শির নেহারী’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর!” কিংবা
“খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া, উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!”
এই লাইনুগলো তার আত্ম-অহংকার ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্যহীনতারই প্রতিচ্ছবি। উপরের এই লেখাগুলোর মাধ্যমে নজরুলের মধ্যে আমরা নাস্তিকতার ছোয়া দেখতে পাই। আবার এটাও সত্য যে, নজরুল বাংলা ভাষায় সর্বাধিক “হামদ-নাত” এর রচয়িতা, তার মুখ থেকেই আমরা শুনেছি- “ইসলাম জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করতে পেরেছে”।
“শির নেহারী’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর!” কিংবা
“খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া, উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ববিধাতৃর!”
এই লাইনুগলো তার আত্ম-অহংকার ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্যহীনতারই প্রতিচ্ছবি। উপরের এই লেখাগুলোর মাধ্যমে নজরুলের মধ্যে আমরা নাস্তিকতার ছোয়া দেখতে পাই। আবার এটাও সত্য যে, নজরুল বাংলা ভাষায় সর্বাধিক “হামদ-নাত” এর রচয়িতা, তার মুখ থেকেই আমরা শুনেছি- “ইসলাম জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে সকলের শ্রদ্ধা অর্জন করতে পেরেছে”।
“মসজিদেরই পাশে মোরে
কবর দিও ভাই” গানটি শুনলে ইসলামের প্রতি তার গভীর অনুরাগের প্রমান পাওয়া
যায়। এই নজরুলই লিখেছেন- “উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ।
আমরা বলিব, সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ“
এক নজরুলের মধ্যে কতই না রুপ!!!!
এক নজরুলের মধ্যে কতই না রুপ!!!!
নজরুল লিখেছেন-
“আল্লাহ আমার প্রভু, আমার নাহি নাহি ভয়
আমার নবী মোহাম্মদ, যাহার তারিফ জগৎময়।
আমার কিসের শঙ্কা,কোরআন আমার ডঙ্কা,
ইসলাম আমার ধর্ম, মুসলিম আমার পরিচয়“
আমার নবী মোহাম্মদ, যাহার তারিফ জগৎময়।
আমার কিসের শঙ্কা,কোরআন আমার ডঙ্কা,
ইসলাম আমার ধর্ম, মুসলিম আমার পরিচয়“
‘মুখে যেন জপি আমি/ কলমা তোমার দিবস যামী’– এখানে সরাসরি
আল্লাহর প্রতি ইমান আনার কথা বলা হয়েছে।
‘মুখেতে কলমা হাতে তলোয়ার / বুকে ইসলামী জোশ দুর্বার/ হৃদয়ে লইয়া এশক আল্লাহ‘ এখানে ঈমানের দৃঢ়তা নিয়ে জেহাদ করার কথা বলা হয়েছে। ‘মহা সমর’ কবিতার প্রথম দুই চরণে ইমানের আহবান তুলেছেন নজরুল এভাবে-তৌহীদ আর বহুত্ববাদে বেধেছে আজিকে মহাসমর/ লা শরীক এক হবে জয়ী কহিছে আল্লাহ আকবর‘।
‘মুখেতে কলমা হাতে তলোয়ার / বুকে ইসলামী জোশ দুর্বার/ হৃদয়ে লইয়া এশক আল্লাহ‘ এখানে ঈমানের দৃঢ়তা নিয়ে জেহাদ করার কথা বলা হয়েছে। ‘মহা সমর’ কবিতার প্রথম দুই চরণে ইমানের আহবান তুলেছেন নজরুল এভাবে-তৌহীদ আর বহুত্ববাদে বেধেছে আজিকে মহাসমর/ লা শরীক এক হবে জয়ী কহিছে আল্লাহ আকবর‘।
রাসূল
(সাঃ) এর প্রতি কাজী নজরুলের ভালোবাসার নিদর্শন পাওয়া যায় এই দু’টি লেখা থেকে-
১। রাসূলের
অপমানে যদি কাঁদে না তোর মন,
মুসলিম নয়, মুনাফিক তুই, রাসূলের দুশমন।
মুসলিম নয়, মুনাফিক তুই, রাসূলের দুশমন।
২। আমি
যদি আরব হতাম মদীনার পথ,
সেই পথে মোর চলে যেতেন নূর নবী হযরত।
পয়জা তার লাগতো এসে আমার কঠিন বুকে,
আমি ঝর্না হয়ে গলে যেতাম অমনি পরম সুখে।
সেই পথে মোর চলে যেতেন নূর নবী হযরত।
পয়জা তার লাগতো এসে আমার কঠিন বুকে,
আমি ঝর্না হয়ে গলে যেতাম অমনি পরম সুখে।
তার
এইসব লেখা দেখে যে কেউই কনফিউজড হয়ে যাবে। আমার ধারনা কাজী নজরুল ইসলাম
মনেপ্রাণে ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করলেও পরিপূর্ণ ইসলামী জ্ঞান তার মধ্যে ছিল না।
আপাত দৃষ্টিতে ঈমানের দিক দিয়ে তিনি পাশ করে গেলেও আমলের দিক দিয়ে তার বেশ কিছু
দূর্বলতা পরিলক্ষিত হয়। ইসলামের নিয়ম কানুন ও বিধি নিষেধ সম্পর্কে তার স্পষ্ট
ধারনা ছিল না। যার ফলে সঙ্গদোষে কিংবা পরিবেশের কারনে মাঝে মাঝে বুঝে কিংবা না
বুঝে ইসলামের আদর্শের বিপরীতে চলে গিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি তার জীবনের প্রথম দিকে
সম্ভবত নাস্তিকদের দ্বারা কিছুটা প্রভাবিত হয়ে পড়েছিলেন, জীবনের শেষদিকে এসে তিনি
তার ভুল শুধরে নেয়ার বেশ চেষ্টা করেছেন। প্রথম জীবনের ভুলের শাস্তি তিনি তার
জীবদ্দশাতেই কিছুটা পেয়ে গেছেন। “আপনারে ছাড়া কাহারে করি না কূর্ণিশ”
এজাতীয় আত্মগরিমাযুক্ত লেখনী লিখে তথা শিরক করে তিনি যে পাপ করেছেন তার
শাস্তিস্বরুপ মাত্র ৪৩ বছর বয়সেই তিনি মরনব্যাধীতে আক্রান্ত হন। অবশেষে মানসিক
ভারসাম্য হারিয়ে প্রায় ৩০ বছর ধুকতে ধুকতে অবশেষে মৃত্যূবরণ করেন। হয়তো এটাই
আল্লাহ পাকের ইচ্ছা যে, তিনি নজরুলকে তার পাপের শাস্তি পৃথিবীতেই দিয়ে দিয়েছেন
যাতে আখিরাতে ক্ষমালাভ করা তার পক্ষে সহজ হয়। হয়তো নজরুলের দৃঢ় ঈমানের কারনেই
আল্লাহ তার প্রতি রহম করেছেন- আখিরাতের লক্ষগুণ বেশি শাস্তি হতে নিস্কৃতিদানের
জন্য হয়তো দুনিয়াতেই তাকে আল্লাহ কঠিন শাস্তি দিয়েছেন….
No comments
Thanks for your comments. I will reply you as soon as.