কোটা নিয়ে যত তালবাহানা
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ আন্দোলন করে আসছিল অনেক দিন ধরেই। আন্দোলনের একপর্যায়ে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে ‘কোটা থাকবে না’ বলে ঘোষণা দিলে শিক্ষার্থীরা তাঁদের আন্দোলনের কর্মসূচি স্থগিত করেন। এর আগে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু ‘অঘটন’ ঘটে। তবে এই অঘটনের জন্য কারা দায়ী, তা এখনো নিরূপিত হয়নি। সরকারের দাবি, আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের বাড়িতে ভাঙচুর করেছেন। আর আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাঁদের কেউ এই অপকর্ম করেননি। উপাচার্যের বাড়িতে হামলার অভিযোগে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরাও আন্দোলনকারীদের কেউ নন।
বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগব্যবস্থা বলছে এখন অনেক উন্নত। তবে আজ ১মাসের বেশি সময় হয়ে গেলো কিন্তু সরকার সঠিক আক্রমণকারীদের মূল হোতা খুঁজে পেতে কেন অক্ষম? আমাদের দেশটি তো এখন অনেক উন্নত। এটা মধ্যম আয়ের দেশও বটে।
এক শিক্ষার্থী বলেছেন, উপাচার্যের বাসভবনের সিসি ক্যামেরা না ভাঙা পর্যন্ত আক্রমণকারীরা সেখানে ছিল। এক মাসের বেশি সময় হলেও সরকার এখনো পর্যন্ত রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। অথচ সরকারের নীতিনির্ধারক মহল থেকে আন্দোলনকারীদের ওপরই দোষ চাপাচ্ছে। আবার কেউ কেউ ঘটনার পেছনে ছাত্রলীগের সম্মেলন ও শিক্ষকদের মধ্যকার বিরোধের প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন। অপরাধী যে-ই হোক না কেন, সরকারের দায়িত্ব প্রকৃত অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা। এ ব্যাপারে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারাও উপাচার্যের বাসভবনের হামলার বিচার দাবি করেছেন। তবে তাঁরা সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে করা পুলিশি মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য হলো, পুলিশ সেদিন বিনা উসকানিতে আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আবার ছাত্রদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীদের ধর্মঘটে যাওয়া সমীচীন নয় অর্থাৎ যুক্তিসংগত নয় বা নিতান্তই একটা বেয়াদবি বলে ধরা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর প্রশাসন গত এক মাসেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিল না। বলা হয়েছে, কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু সেই কমিটি কেন আন্দোলনকারীদের কথা শোনার চেষ্টা করল না। ওবায়দুল যে, এক মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান করবেন বলেছেন, সেটি অনেক আগেই শেষ হয়েছে।
এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণারও এক মাস পার হয়েছে ১১ মে। ফলে শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভ জমা অস্বাভাবিক নয়। আর এই ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকটি স্থানে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায়।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বহনকারী বাসে অতর্কিত হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় নগরের পুলিশ লাইনস এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ছাত্রলীগ ওই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে মহানগর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও যোগ দেন। পুলিশ লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের সেল নিক্ষেপ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়।
সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখার আহ্বায়ক মজহারুল ইসলাম হানিফ বলেন, তিনজন আন্দোলনকারীকে চড়-থাপ্পড় দেওয়া হয়। পরে কর্মসূচি না করেই আমরা চলে আসি। পুলিশ লাইনের ঘটনায় ছাত্রলীগের সরকারি কলেজ ও মহানগরের কয়েকজন নেতা এ হামলার সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনার বিচার চাই। কোটা সংস্কার আন্দোলন করার কারণেই বাস ভাঙচুর ও অতর্কিত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। পুলিশ ছাত্রলীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ততবে অন্য দিকে সকালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা কোটার পক্ষে কান্দিরপাড়ে মানববন্ধন করে। ছাত্রলীগ সেখানে কারও ওপর হামলা করেনি। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় কোটার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ আরেক শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগের কর্মীরা মারধর করেছেন। ওই শিক্ষার্থী হল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ছাড়া আরও কয়েকটি স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। কোটা যদি বাতিল করা হবে তবে সাধারণ ছাত্রদের কেন এইভাবে হয়রানি করা হচ্ছে?
সরকার কালক্ষেপণের কৌশল নিয়েছে। দুদিন পরই রোজা শুরু হলে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের কেউ থাকবেন না। তাছাড়া রোজা রেখে অনেকেই আন্দোলনে যোগ দিতে চাইবেনা। অন্য দিকে, নগরের সাধারণ জনগণও তাদের এই আন্দোলনের বিরোধিতা করতে পারে বা নিন্দা জানাতে পারে বলে আমার দাবি। কেন না, সাধারণ জনগণ রোজা রেখে যখন রাস্তায় জ্যামে আটকে যাবে তখন স্বাভাবিক ভাবেই রোজাদার ব্যক্তিরা তাদের এই আন্দোলনের পক্ষে হতাশা জ্ঞাপন করবে। এটাই হলো বাংলাদেশ সরকারের কুচিন্তা।
কিন্তু এ জন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পুরোপুরি দায়ী করা যাবে না। তাঁরা আগেই কর্মসূচির কথা জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সরকার কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি। শিক্ষার্থীরাও জানেন, কোটার সমস্যাটি বেশ জটিল। এ কারণে তাঁরা কোটা বাতিল চাননি। সংস্কার চেয়েছেন। তাঁরা নির্দিষ্ট কোনো কোটার কথাও উল্লেখ করেননি। তাঁরা বলেছেন কোটা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসতে। এ ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসতেও পারত। সরকারের সময়ক্ষেপণের কৌশলের কারণেই শিক্ষার্থীরা ফের মাঠে নেমেছেন। ফের ঢাকা শহর অচল হয়ে পড়ল। বিভিন্ন স্থান থেকে যে খবর আসছে, তাতে দেখায় যায়, দেশের প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছে। এত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ক্ষতিটি চিন্তা করুন।
২২ লাখ তরুণকে উপেক্ষা করবেন না
সরকারি চাকুরের সংখ্যা ১৪ লাখের মতো। সেই ১৪ লাখ চাকরিজীবীর জন্য সরকার অনেক কিছুই করেছে, এখনো করছে। কিন্তু বর্তমানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা যে ফেসবুক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন, তার সদস্যসংখ্যা ২২ লাখ। তাঁদের কতজন চাকরি পাবেন, সেটি নিশ্চিত নয়। প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা তো বলেই ফেললেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পেছনে শিবির রয়েছে। কিন্তু কোটা আন্দোলনকারী নেতারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সরকার প্রমাণ দিতে পারবে না এই আন্দোলনের সঙ্গে কোনো ছাত্রসংগঠনের সম্পৃক্ততা আছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায় আন্দোলনের প্রতি জনগণের প্রতিনিধিত্ব দাবি করে, এমন একটি সরকার কীভাবে এত অসংবেদনশীল থাকে। আর এক মুহূর্তও দেরি না করে প্রজ্ঞাপন জারি করুন। ২২ লাখ তরুণের ন্যায় দাবি ও আবেগকে উপেক্ষা করবেন না।
======================================
আমার ফেসবুক পেজ :- www.facebook.com/AbdullahIbneMasud5
-----------------------------------------------------------------------
আমার ব্লগ সাইট :- www.AbdullahIbneMasud5.blogspot.com
-----------------------------------------------------------------------
আমার ফেসবুক গ্রুপ :- www.facebook.com/groups/AbdullahIbneMasud5
No comments
Thanks for your comments. I will reply you as soon as.