শিরোনাম

ধর্ষন প্রতিরোধে ছেলেদের দায়িত্ব বেশি? নাকি মেয়েদের?

ধর্ষন প্রতিরোধে ছেলেদের দায়িত্ব বেশি? নাকি মেয়েদের?

অত্যন্ত বিতর্কিত এই ইস্যুটি নিয়ে প্রায়ই জলঘোলা করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছেলেরা প্রায় পুরোটা দোষই চাপিয়ে দিতে চান মেয়েদের উপর। আবার মেয়েরাও প্রায় একইভাবে সমগ্র দায়-দায়িত্ব পুরুষ জাতির উপর চাপিয়ে দিয়ে মুক্তি পেতে চান।
আমি একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে বিষয়টাকে বিশ্লেষন করতে চাই।

আচ্ছা, বলুন তো- ধর্ষকের কি এমন ঠেকা পড়েছে যে সে চোখের/মনের পর্দা করতে যাবে? ধর্ষনে ভুক্তভোগী কে? ক্ষতিগ্রস্থ হয় কে? অবশ্যই ধর্ষিতা মেয়েটা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্ষক কিন্তু ধরাছোয়ার বাইরেই থেকে যায়, কোনভাবেই সে ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। স্বাভাবিকভাবেই এখন প্রশ্নটা আসে-ধর্ষন প্রতিরোধ করার দায়টা তাহলে কার বেশি? ধর্ষিতার নাকি ধর্ষকের?

আমি এখানে ছেলেদের পক্ষাবলম্বন করছি না, আমি মেয়েদের শুভাকাঙ্খী বলেই তাদের নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনা করছি সবার আগে। যেহেতু ধর্ষন কিংবা নির্যাতনে মেয়েরাই ভুক্তভোগী হয় বেশি, তাই এটি প্রতিরোধের দায় কিংবা প্রয়োজনীয়তাটুকুও তাদেরই বেশি বলে মনে করি আমি। দায়টা অবশ্যই ধর্ষিতার, কোনভাবেই ধর্ষকের নয়। কেননা, ক্ষতিগ্রস্থ হয় ধর্ষিতা, ধর্ষক নয়। তাই যারা ধর্ষনের ঝুকির মধ্যে আছেন সেইসব সম্ভাব্য ধর্ষিতাদেরকেই ধর্ষন প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে, নিজ স্বার্থেই তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। মেয়েরা নিজের ভালটা যদি নিজেরা না বুঝে, নিজেদের স্বার্থে যদি তারা একটু স্যাক্রিফাইস করতে না পারে, তাহলে ছেলেদের কি এমন ঠেকা পড়েছে যে তারা মেয়েদের স্বার্থরক্ষায় ঝাপিয়ে পড়বে?
ধরুন আমি সরকারী দলের প্রভাবশালী একজন কর্মী, আমি যদি একটা মেয়েকে ধর্ষন করি, আমার কোন ক্ষতি আছে কি? যেহেতু আমি ধার্মিক নই, তাই পরকালের ভয় আমার না করলেও চলবে। আর যেহেতু আমি সরকারী দল করি, তাই পুলিশ কিংবা আইনের তোয়াক্কাও আমি করব না।

অন্যদিকে যাদেরকে আমি ধর্ষন করলাম তাদের অবস্থাটা কি হবে? তারা হয় লজ্জায় আর ক্ষোভে আত্মহত্যা করবে আর নয়তো কলঙ্কের দাগ মাথায় নিয়ে বাকিটা জীবন কাটাবে। ক্ষতি যা হবার ধর্ষিতা মেয়েগুলোরই হবে, আমার তো কিছুই হবে না। তাহলে কোন দূঃখ্যে আমি ধর্ষন প্রতিরোধ করতে যাব? আমার কি দায় পড়েছে ধর্ষন ঠেকানোর? ঠেকাটা তো মেয়েদের।

আমি বরং চাইবো মেয়েরা আরো বেশি সহজলভ্য হোক, আরো বেশি করে স্বাধীনতা পাক, যাতে আমি আরো সহজে তাদেরকে শিকারে পরিনত করতে পারি। মেয়েরা যদি ধর্মীয় বিধান না মানে, যদি অশালীন পোশাক পরে, যদি যেখানে সেখানে গমণ করে, তাহলে আমারই সুবিধা।

অনেকে হয়তো বলবে- পহেলা বৈশাখে তো মেয়েরা অশালীন পোশাক পরে না, ঐদিন তারা বাঙালী মেয়েদের চিরায়ত পোশাক শাড়ী পরে। তাহলে টিএসসিতে কেন তাদের উপর নিপীড়ন চালানো হয়েছিল? এখানে মনে রাখতে হবে, অশালীন পোশাক নারী নির্যাতনের একমাত্র কারন নয়, বরং এটা হল অনেকগুলো প্রধান কারনের মধ্যে একটা। পোশাক ছাড়াও আরো নানা কারনে নারীরা আক্রান্ত হতে পারে। ভুল সময়ে ভুল জায়গায় উপস্থিত হলেও নারীর শ্লীলতাহানির সম্ভাবনা থাকে। টিএসসির মত জায়গা নারীদের জন্য কখনোই নিরাপদ নয়, কখনো ছিল না, কখনো হবেও না। এটা জেনেও যদি কোন মেয়ে ওরকম একটা জায়গায় ওরকম সময়ে উপস্থিত থাকে- তাহলে সেটা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারারই শামিল।
ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে অনেকে হয়তো বলবেন- মেয়েরা পোশাকের পর্দা করবে আর ছেলেরা চোখের পর্দা করবে- এটাই তো ইসলামের বিধান। তাহলে উভয়েরই তো করণীয় আছে এখানে। হ্যাঁ, আমিও এব্যাপারে একমত। কিন্তু সমস্যা হল- ধর্ষকরা এব্যাপারে একমত নয়। একবার ভেবে দেখুন তো- ধর্ষন কারা করে? তারা কি খুব ধার্মিক? তারা কি মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র? তারা কি কুরআনের হাফেজ? তারা কি জামাত-শিবির-হেফাজত কিংবা ওলামা লীগ? কোনটাই না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষক হল সন্ত্রাসী, নাস্তিক, অথবা নামে মাত্র ধর্ম পালন করে এমন কোন ব্যক্তি (যাদের ব্যক্তিজীবনে ধর্মের কোন প্রভাবই নেই)। এই ধরনের লোকেরা ধর্মীয় বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ধর্ষন থেকে বিরত থাকবে এমনটা আশা করা কি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?

ধর্মীয় বিধান অমান্য করলে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ই পরকালে ভুক্তভোগী হবে, কিন্তু নগদে ভুক্তভোগী হচ্ছে কেবল মেয়েরা। পোশাকের পর্দা না করলে একটি মেয়ে পৃথিবীর জীবনে যেমন ধর্ষন এবং নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, একইসাথে পরকালেও তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। অন্যদিকে চোখের পর্দা না করা ছেলেরা পরকালে ভুক্তভোগী হলেও পৃথিবীর জীবনে তাদের গায়ে একটা আচড়ও পড়বে না। এক কথায়, ছেলেদের শাস্তিটা পরকালের পাওনা হিসেবে থেকে যাচ্ছে, কিন্তু মেয়েরা শাস্তি পাচ্ছে নগদে। অতএব, সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে, ধর্ষন প্রতিরোধে তাদের দায় অনেক অনেক বেশি।

আরেকটা ব্যাপার না বললেই নয়, একটা মেয়ের পক্ষে অশালীন পোশাক ত্যাগ করাটা যতটা কঠিন, একটা ছেলের পক্ষে নারীদেহের লোভনীয় অংশের দিকে দৃষ্টি পড়ার পরও চোখ সরিয়ে নেয়াটা তারচেয়ে শতগুন বেশি কঠিন। মেয়েরা নিজেদের স্বার্থে নিজেরা যদি অল্প কঠিন কাজটা করতে না পারে, তাহলে ছেলেরা এরচেয়ে শতগুন কঠিন কাজটা কিভাবে করবে- কেনই বা করবে? তারপরও যারা প্রকৃত ধার্মিক তারা ঠিকই নিজেদের দৃষ্টি সংযত রাখছে, অন্তত তারা নারী নির্যাতনে জড়াচ্ছে না। এদেরকে নাহয় পরকালের ভয় দেখিয়ে নিবৃত্ত করা গেল। কিন্তু এদের সংখ্যা একেবারেই অল্প। বেশিরভাগ মানুষই ধার্মিক নয়, আর তাই পরকালের ভয় দেখিয়ে এদেরকে শুধরানো সম্ভব নয়। এর একটাই মানে দাড়াচ্ছে, ছেলেদের চোখের/মনের পর্দা মেয়েদেরকে রক্ষা করার উপায় হতে পারে না। বরং এক্ষেত্রে মেয়েদের ভূমিকাই বেশি, তাদের দায়ও বেশি, দায়িত্বই বেশি। পরিপুর্ন হিজাব যদি নাও করে মেয়েরা, অন্ততপক্ষে ন্যুনতম শালীনতাটুকু বজায় রাখা উচিত। জিন্স, টি শার্ট, লেগিংস, জেগিংস, মিনি স্কার্ট এগুলো তো আমাদের দেশীয় পোশাক নয়। ধর্মে তো এগুলো পরার সুযোগ নেইই, এমনকি বাংলা সংস্কৃতির দোহাই দিয়েই এগুলো পরার সুযোগ নেই। এগুলো না পরলে যে একটা মেয়ের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে এমনটাও নয়। তাহলে কেন মেয়েরা এই ধরনের পোশাক ত্যাগ করতে পারবে না যেটা প্রথমত: তাদের সংস্কৃতির অংশ নয়, দ্বিতীয়ত: তাদের মর্যাদাহানি করছে এবং তৃতীয়ত: তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিচ্ছে।

==================================================================================================================================================
My Facebook Page:- www.facebook.com/AbdullahIbneMasud5
---------------------------------------------------------------------------------------------
My Blog site:- www.AbdullahIbneMasud5.blogspot.com
---------------------------------------------------------------------------------------------
My Facebook Group:- www.facebook.com/groups/AbdullahIbneMasud5

No comments

Thanks for your comments. I will reply you as soon as.