পোশাকশ্রমিকদের বেতন-বোনাস
পোশাকশ্রমিকদের বেতন-বোনাস
________________________________________
রমজান মাসের দুই সপ্তাহ পেরোল। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিশিল্প তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের চলতি মাসের বেতন ও ঈদুল ফিতরের বোনাস ঠিক সময়ে পরিশোধ করার দাবি উঠেছে। সাধারণত অন্য কোনো শিল্পের শ্রমিকদের বেতন-বোনাসের ব্যাপারে এমন দাবি ওঠে না; এই শিল্পের ক্ষেত্রে এমনটি হওয়ার কারণ অতীতের দুঃখজনক ও তিক্ত অভিজ্ঞতা। অতীতে প্রায় প্রতিবছরই ঈদের কয়েক দিন আগে থেকে পোশাকশ্রমিকদের বেতন-বোনাসের দাবিতে ধরনা দিতে দেখা গেছে, মালিকদের একাংশের মধ্যে গড়িমসিও কাজ করত। সেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে, তবে সঠিক সময়ে বেতন-বোনাস পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা সম্পূর্ণভাবে দূর হয়নি।
গত মঙ্গলবার শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা যেন ২৮ রমজান অর্থাৎ ১৪ জুনের মধ্যে শ্রমিকদের ঈদের বোনাস পরিশোধ করেন। সেই সঙ্গে তিনি এটাও বলেছেন, চলতি মে মাসের বেতন যেন জুনের প্রথম সাত কর্মদিবসের মধ্যেই পরিশোধ করা হয়। দেখা যাচ্ছে, ১৪ জুন ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস, তার পরদিন থেকে ঈদুল ফিতরের ছুটি শুরু হয়ে যাবে। অর্থাৎ ওই তারিখের মধ্যে ঈদ বোনাস পরিশোধ করার আহ্বানের অর্থ, মালিকদের শেষ দিন পর্যন্ত সময় দেওয়া। ওই দিনের মধ্যে বোনাসের অর্থ শ্রমিকদের হাতে না পৌঁছালে তাঁদের ঈদ উৎসবের বোনাস অপ্রাপ্ত থেকে যাবে, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। বরং একদম শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আরও আগেই বোনাস পরিশোধ করলে শ্রমিকদের কেনাকাটার সুবিধা হবে। মনে রাখা দরকার, পোশাকশ্রমিকেরা শুধু খাদ্যদ্রব্যই কিনবেন না, সন্তানদের জামাকাপড়ও কিনবেন। শিশুরা উদ্গ্রীব হয়ে থাকবে নতুন জামা বা জুতার জন্য।
শ্রমিক সংগঠনগুলো দাবি জানিয়ে আসছে, ঈদুল ফিতরের বোনাস যেন ২০ রমজানের মধ্যেই পরিশোধ করা হয়। এটাই যুক্তিসংগত দাবি। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী যদি শ্রমিক সংগঠনগুলোর এই দাবি বিবেচনায় নিয়ে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের প্রতি আহ্বানটা জানাতেন, তাহলেই ভালো হতো। কারণ, ঈদের আগে পোশাকশ্রমিকদের একটা বড় অংশের মধ্যে যে অসন্তোষ লক্ষ করা যায়, তার অন্যতম কারণ ঈদের অন্তত এক সপ্তাহ আগে পূর্ববর্তী মাসের বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস না পাওয়া। তাই একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা না করে ২০ রমজানের মধ্যেই ঈদ বোনাস পরিশোধের চেষ্টা করাই শ্রেয়। যেসব কারখানার পক্ষে সেটা কিছুতেই সম্ভব হবে না, তারা যেন প্রতিমন্ত্রীর আহ্বান অনুযায়ী ২৮ রমজানের মধ্যেই শ্রমিকদের বোনাস মিটিয়ে দেয়। এটা আহ্বানের মধ্যে সীমিত থাকলে চলবে না, নিশ্চিত করতে হবে। তা করার দায়িত্ব প্রধানত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর ।
বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করা সম্ভব হবে। আবার পত্রিকান্তরে এমন খবরও প্রকাশিত হয়েছে যে বেশ কিছু কারখানায় ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধ নিয়ে সমস্যা হতে পারে। পত্রপত্রিকার খবর অনুযায়ী, গত মার্চে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও খুলনা এলাকার ১৬৮টি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের অসন্তোষ প্রকাশের ঘটনা ঘটে। পরের মাসে অসন্তোষের প্রকাশ ঘটে ১৫৮টি কারখানায়। ঈদের আগেও কিছু কারখানায় শ্রমিকদের অসন্তোষ প্রকাশের ঝুঁকি রয়েছে বলে পত্রিকান্তরে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে পোশাক কারখানাগুলোর শ্রমিকদের যথাসময়ে বেতন-বোনাস পরিশোধের প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা উচিত। শ্রমিক অসন্তোষ থেকে থাকলে তা দূর করার উপায় হলো তাঁদের অসন্তোষের কারণ দূর করা। এই মুহূর্তের করণীয় হলো ঈদের আগেই সব পোশাক কারখানার শ্রমিকদের হাতে তাঁদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাস পৌঁছে দেওয়া।
No comments
Thanks for your comments. I will reply you as soon as.