নারী বাস চালু করা হোক।
উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বাসের ভেতর নিপীড়ন করায় গত
কয়েকদিন ধরে বেশ আন্দোলন করছে ছাত্র-ছাত্রীরা (https://bit.ly/2KqAGzI )। আমার কাছে বিষয়টি
খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। তবে শুধু একটি ঘটনা নয়, একটি
জরিপে দেখা গেছে, বাসে নারী যাত্রীদের ৯৪% যৌন নিপীড়নের
শিকার হোন। কেউ বিষয়টি মুখে প্রকাশ করতে পারেন, কেউবা চুপ
করে যান । (https://bit.ly/2KoDBcf)
অনেকে বিষয়টি নিয়ে অনেক ধরনের সমাধান দিয়েছেন। কিন্তু আমার কাছে
মনে হয়েছে বাসে গণহারে নারী হয়রানী বন্ধের একমাত্র সমাধান ‘নারীদের জন্য পৃথক বাস’ সার্ভিস চালু করা, যে বাসে শুধু ড্রাইভার ছাড়া হেলপার কন্ট্রাকটর ও যাত্রী সবাই নারী হবে।
এতদিন বাসে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ছিলো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে
বাসে উঠতে এবং সংরক্ষিত নারী আসনে যেতে যেতে একজন নারীকে একাধিক হয়রানীর শিকার হতে
হয়। এছাড়া অধিকাংশ সময় সংরক্ষিত নারী আসনের থেকেও নারীযাত্রী সংখ্যা বেশি।
কিছুদিন আগে বিআরটিসি পরীক্ষামূলকভাবে
১২টি নারী বাস চালু করেছিলো (https://bit.ly/2HDiSnh )। কিন্তু দেখা যায়, সে বাসগুলোতে নারী যাত্রী সংখ্যা কম। এর কারণও আছে। কারণ- এত বড় শহরে
মাত্র ১২টা বাস, কখন কোথায় আসবে, কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে তার কোন ঠিক নাই। তাই নারীরা অপেক্ষা না করে
সাধারণ বাসে চড়ে যাতায়াত করে। তাই নারী বাসও খালি যায়।
সমাধান কি ?
সরকারীভাবে পুরো ঢাকা শহরে একটা জরিপ করতে হবে। ঢাকা শহরে কোন রুটে, কখন, কত পার্সেন্ট নারী যাত্রী যাতায়ত করে। দেখা গেলো সময় ভেদে মোট যাত্রীর ২০%, ৩০% ৪০% নারী যাত্রী হয়। সকাল-দুপুর-সন্ধা হিসেবে এই পার্সেন্টিস উঠা-নামা করে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বাস কোম্পানিগুলো প্রতি আইন করে দিতে হবে, প্রত্যেক রুটে নারী পার্সেন্টিস অনুসারে নারীবাস দিতে হবে। ধরে নিলাম সকালে ৩০-৪০% নারীযাত্রী থাকে, তবে ঐ রুটে প্রত্যেক বাস কোম্পানিকে বাধ্যতামূলকভাবে ১০টা বাসের মধ্যে ৪টা বাস নারীবাস দিতে হবে। দুপুরে সেটা কমে ২০% হলে গেলে ১০টা বাসে ২টা নারী বাস দিতে হবে। অফিস ছুটির টাইমে হয়ত নারীযাত্রী সংখ্যা ৩০% হয়ে গেলো, তখন নারীবাসের সংখ্যা ১০ টার মধ্যে বাধ্যতামূলক ৩টা দিতে হবে। পুরো সিস্টেম কন্ট্রোলের জন্য বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে লোক থাকতে হবে, কেউ নিয়ম ভঙ্গ করলে বা নারীবাস কম দিলে তার রুট পারমিট ক্যান্সেল হবে। (জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বেতন পাওয়া বিআরটিএ’র কাজ শুধু বসে বসে ঘুষ খাওয়া না, জনগণের জন্য কিছু করা।)
তবে আমার ধারণা, অনেক নারী বাসে সমস্যার কারণে রিকশা বা অন্যবাহনে যাতায়াত করে
(অন্যবাহনগুলোতে নারীরা হয়রানীর শিকার)। কিন্তু নারীবাস চালু হলে অনেক নারীই রিকশা
বা অন্যবাহন ছেড়ে স্বাচ্ছন্দে বাসে উঠতে পারবে। তখন দেখা যাবে নারী বাসের সংখ্যা
কমপক্ষে ৩০% পর্যন্ত লাগতে পারে।
কিছুদিন আগেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে ‘গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৮ ’
নিয়ে এসেছেন। নারী জাতির প্রতি অবদানের জন্যই নাকি এ পুরষ্কার।
ভালো কথা। কিন্তু যে দেশের ৯৪% নারী যাতায়তের সময় যৌন হেনস্তা শিকার হন, সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার এ পুরষ্কার কতটুকু গুরুত্ব থাকতে
পারে ?
আমি বলবো, নারীকে
শুধু ঘরের বাইরে বের করে নিয়ে আসলেই চলবে না, নারীকে
নিরাপত্তা দিতে হবে। এবং প্রধানমন্ত্রী তথা সরকারেরই সে দায়িত্ব নিতে হবে।
যাতায়তের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য পৃথক বাস সার্ভিস চালু করতে হবে। এবং অবশ্যই
সেটা বিচ্ছিন্নভাবে নয়, নারীর আনুপাতিক সংখ্যা মেনেই
সরকারী ও বেসরকারী বাস সার্ভিসগুলোতে সে সুবিধা দ্রুত চালু করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে
শুধু সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন, অন্যকিছু নয়।
=========================================================================================
No comments
Thanks for your comments. I will reply you as soon as.