বিদেশের মাটিতে নারী শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ হোকঃ-
বিদেশের মাটিতে নারী শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ হোকঃ-
----------------------------------------------------------------------
সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে ফেরত আসা নির্যাতনের শিকার কয়েকজন নারী। চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছেড়ে সৌদি আরব গিয়েছিলেন গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে। ফেরত এসেছেন পলিথিন ভরা কয়েকটি ছেঁড়া কাপড় নিয়ে। নির্যাতনের কোন কথা রেখে কোন কথা বলবেন তা ভাবতেই খেই হারিয়ে ফেলছিলেন বারবার।
গতকাল রাত ১০টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কথা গুলো বলেছিলেন এক নারী।
নির্যাতনের শিকার ওই নারীসহ ফেরত এসেছেন ২৯ জন নারী। এদের সবার সকল ক্ষোভ গিয়ে পড়ছিল সরকার ও দালালদের ওপর। এই নারীরা ফিরছেন, গণমাধ্যমের কাছে আগে থেকে এ খবর ছিল। ফলে বিমানবন্দরের ভেতর থেকে ক্লান্ত পায়ে বের হয়েই এই নারীরা একাধিক গণমাধ্যমের ক্যামেরার মুখোমুখি হন। নিজের মুখ ঢাকতে এই নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কেননা তাঁরা নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন এ খবর এলাকার লোকজন দেখে ফেললে লজ্জায় মুখ দেখানোর উপায় থাকবে না।
তবে এই নারীদের বেশির ভাগই দেশে ফিরেছেন সে তথ্য তাঁর পরিবারের স্বজনদেরও জানানোর সুযোগ পাননি। খালি হাতে ফেরত আসার কারণে বেশির ভাগের হাতে মুঠোফোনও নেই। গণমাধ্যমকর্মীদের কেউ কেউ কোনো কোনো নারীর বাড়ির মুঠোফোনে ফোন করে তাঁদের দেশে ফেরার খবর জানাতে সহায়তা করেন। অনেকেই জানেন না রাতের বেলা তাঁরা কোথায় যাবেন।
নির্যাতনের শিকার হওয়া সৌদি আরব ফেরত এই নারীদের সহায়তা করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তথ্য কর্মকর্তা আল-আমিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যে নারীদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তাঁদের ব্র্যাকের একটি সেন্টারে সাময়িক আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আর যাঁদের যাওয়ার জন্য হাতে টাকা নেই সেই নারীদের আর্থিকভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। অসুস্থ হয়ে কেউ ফিরলে তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কয়েক দিন বেশি সময় আশ্রয় লাগলে অভিবাসন নিয়ে কর্মরত ওকাবের আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হচ্ছে।
ব্র্যাকের এই কর্মকর্তা জানালেন, তাঁকে কিছুদিন পরপরই ব্র্যাকের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরে উপস্থিত হতে হচ্ছে ফেরত আসা নারীদের সহায়তা করার জন্য।
ব্র্যাকের বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী,
চলতি বছরের মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে প্রায় তিন শ নারী ফেরত এলেন। এদের মধ্যে কেউ মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় ফিরেছেন, আবার কেউ বা ফেরত এসেছেন #অন্তঃসত্ত্বা হয়ে। এই নারীদের অনেককে তাঁর পরিবারও আর ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে না।
এই নারীদের একজন জানালেন, তিনি মাত্র চার মাস আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। নির্যাতনে টিকতে না পেরে বাড়ি (যে বাড়িতে কাজ করতেন) থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের দূতাবাসে আশ্রয় নেন।
খাবার না দেওয়া, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পারলে ২০ ঘণ্টাই কাজ করানো, বেতন চাইলে মারধর করা, বাথরুমে আটকে রাখা, বাড়িতে কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে না দেওয়াসহ অসংখ্য নির্যাতনের কথা বলছিলেন একেকজন।
যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তা কেউ সরাসরি স্বীকার করেননি। তবে কেউ কেউ বলেন, সে চেষ্টাও করেছে মালিক। তাই নিজের জীবন ও ইজ্জত বাঁচানোর জন্যই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি থেকে পালান। নিজেদের অভিজ্ঞতায় জানান, সফর জেলে থাকা আরও প্রায় ৫৯ নারীর কেউ কেউ যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মারধর করে কারও কারও হাত পাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
একজন জানালেন, তাঁকে তাঁর মালিক আরেক মালিকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তা নবায়ন না করে খালি হাতে দেশে পাঠিয়ে দেন।
নয় মাস কাজ করার অভিজ্ঞতায় এক নারী বলেন, তিনি যে বাড়িতে কাজ করতে যান সেখানকার মানুষ খুব খারাপ ছিল। #তলপেটে #লাথি দিত। সারাক্ষণ খারাপ আচরণ করত। রাতে ঘুমাতে দিত না। দিনে রাতে দুই ঘণ্টা বিশ্রাম নিলে তাও নিতে হতো ভয়ে ভয়ে।
সরকার সব জানার পরেও নারীদের কেন সৌদি আরবে কাজের জন্য পাঠাচ্ছে সে প্রশ্নও তোলেন কেউ কেউ। তবে আমার ভাষ্যমতে, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্যে বা পেটের দায়ে অনেকেরই যেতে হয় বিদেশে তবে তাদের সকল নিরাপত্তা দেয়ার কথা বলা আছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নীতিমালাতে যার কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমি তুলে ধরছি-----
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশ 'সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়', এই নীতি অনুসরণ করে বৈদেশিক সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হওয়ার কারণে অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর বাংলাদেশের সঙ্গে সুদৃঢ় কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক রয়েছে। পাশাপাশি, রাজনৈতিকভাবে বাংলাদেশ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী।
১৯৯১ সালে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রপ্তানি শুরু হয়। সরকারি মতে, বর্তমানে প্রায় ১৩ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন যা সারা বিশ্বের শ্রমিক গ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। তবে বেসরকারি মতে, সৌদিতে বর্তমানে ২০ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করছেন।
অন্যদিকে পররাষ্ট্রনীতির প্রধান দশটি দিক আছে তারমধ্য থেকে প্রবাসীদের কল্যাণের ব্যাপারে যেদিকে বলা আছে সেটাই তুলে দিলাম-
১.প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিদেশের সাথে ভারসাম্যমূলক ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ;
৪.বিদেশে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ এবং নতুন শ্রমবাজার সন্ধান ;
৫.প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ;
♦বিনামূল্যে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস যেসকল কল্যাণমূলক সেবা দেয়ার কথা বাংলাদেশী প্রবাসীদের তার মধ্যে-
>দূতাবাসের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের নানাবিধ কল্যাণমূলক কাজের সমন্বয় ;
>বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের জরুরি কনস্যুলার সহায়তাসহ অন্যান্য সেবা প্রদান ;
>বিধি মোতাবেক বিভিন্ন দলিল-দস্তাবেজের সীল ও স্বাক্ষরসমূহের প্রত্যয়ন।
>প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের বাংলাদেশী পাসপোর্ট প্রদান ও নবায়ন ;
>বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত বিদেশী নাগরিকদের পাসপোর্টে প্রদান ;
>বিধি মোতাবেক বাংলাদেশী ও বিদেশী দলিলাদির প্রত্যায়ন ;
>বিদেশে আটক বাংলাদেশীদের দেশে প্রত্যাবাসন
>প্রবাসী বাংলাদেশীরা চাকুরিকালীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে চাকুরির শর্তানুযায়ী তাঁদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ। এছাড়াও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা পঙ্গুত্ববরণকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের ক্ষতিপূরণ আদায়ের ক্ষেত্রেও যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
>প্রবাসে কোন বাংলাদেশী মৃতুবরণ করলে তার লাশ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা
>প্রবাসী ব্যক্তিগণ সংশ্লিষ্ট দেশে বসবারত অবস্থায় হঠাৎ কোন জরুরি বা দুর্যোগপূর্ণ অবস্থার শিকার হলে সে দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে। যেমন : প্রাকৃতিক বা অন্য কোন দুর্যোগ আক্রান্ত প্রবাসীদের এক স্থান থেকে অন্য নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা। এছাড়া প্রবাসে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া কোন ব্যক্তির সন্ধান লাভের জন্যও যথাসম্বব চেষ্টা করা হয়।
অথচ, এতো এতো নীতির পরেও আমাদের দেশের নাগরিকরা বিদেশে গিয়ে অনেক অনেক নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে যার রুপ সেই সকল নারীদের কথা শুনেই বুঝে ফেলার কথা!
বিশেষ করে, নারীরা বাসা বাড়ির কাজে যাচ্ছে এবং সেখানে নির্যাতিত হচ্ছে তবে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে যে, সবাই কিন্তু বাসা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের দূতাবাসে আসতে পারবেনা কেননা তাদের আটকিয়ে রাখা হয়, বেঁধে রাখাও হয়। তাছাড়া নির্যাতিত নারীরা মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতে পারেনা মাত্র গুটিকয়েক ছাড়া!
তাই বিদেশে নিযুক্ত প্রতিটি দূতাবাসকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া নাগরিকদের একটা তালিকা রাখতে হবে আর সেই তালিকাভুক্ত নাগরিকদের সবাইকে সপ্তাহে বা ১৫দিন পর পর ফোন করে তাদের নিযুক্ত মালিকদের সাথে কথা বলা এবং ঐ নাগরিকদের সাথেও কথা বলতে হবে তাদের কি কোনো সমস্যা বা তাদের উপরে কোনো নির্যাতন চালায় কিনা। তাহলেই উক্ত ব্যক্তিরা অতি সহজেই তাদের সমস্যাবলী বাংলাদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের জানাতে পারবেন আর দূতাবাসও সেই দিক বিবেচনা করে প্রবাসী নাগরিকদের সহায়তা করতে পারবে বলে আশা করা যায়।
কেননা, প্রবাসিদের টেক্সের টাকা দিয়ে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে বসে বসে ঘুমাবে আর আমাদের দেশের খেটে খাওয়া মানুষের সেই দেশে নির্যাতিত হবে এটা হতে পারেনা। এটা কোনো সভ্য সমাজের নীতি হতে পারেনা।
অন্যদিকে লক্ষ্য নয় বরং জোরালো ভাবে জানাতে হবে সেই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। কেন আপনার দেশের নাগরিকেরা আমার দেশের নাগরিকদের উপরে অত্যাচার চালায়? এর প্রতিকার চেয়ে কঠিন থেকে কঠিনতম আইন বানাতে হবে এবং তার যথাযথ বাস্তবায়নের সাথে নির্যাতনকারীদের শাস্তিও দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কেননা, দেশের সিংহভাগ টাকাই কিন্তু তাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসে আর সেই টাকার জোরেই AC রুমে বসে বসে চুদুরবুদুর করেন আমার দেশের আমলারা।
======================================
আমার ফেসবুক পেজ :- www.facebook.com/AbdullahIbneMasud5
-----------------------------------------------------------------------
আমার ব্লগ সাইট :- www.AbdullahIbneMasud5.blogspot.com
-----------------------------------------------------------------------
আমার ফেসবুক গ্রুপ :- www.facebook.com/groups/AbdullahIbneMasud5
No comments
Thanks for your comments. I will reply you as soon as.