শিরোনাম

আহ্‌মদীয়া

আহ্‌মদীয়া

আহ্‌মদীয়া পূর্ণরূপ আহমদীয়া মুসলিম জামাত আরবী: الجماعة الإسلامية الأحمدية‎‎, উচ্চারণ: আল-জামাত-আল-ইসলামীয়াহ-আল-আহমাদীয়াহ, উর্দু : احمدیہ مسلم جماعت) একটি ইসলামী ধর্মীয় আন্দোলন, যেটার উৎপত্তি পান্ঞ্জাবে হয়, উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে। এটার মূল শিক্ষা এসেছে মির্যা গোলাম আহমদ সাহেবের(১৮৩৫-১৯০৮) এর জীবন ও শিক্ষাকে অনুসরণ করে, যিনি ইসলামের প্রতিশ্রুত শেষযুগের বিশ্বের মানুষের জন্য সংস্কারক হিসেবে প্রেরিত হবার দাবী করেছিলেন, যেই সংস্কারকের কাজ হবে শান্তির সাথে পৃথিবীতে ইসলামের চূড়ান্ত বিজয় নিশ্চিত করা যেভাবে ইসলামের বিভিন্ন কোরআনের আয়াত ও হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে এবং বিশ্বের অন্যান্য ধর্মের বিভিন্ন পুস্তকেও যাঁর আগমণের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। তিনি দাবী করেছিলেন যে আল্লাহ তাঁকে ইসলামের মুজাদ্দিদ (সংস্কারক), সেই প্রতিশ্রুত মসীহ ও মাহদী হিসেবে প্রেরণ করেছেন যাঁর অপেক্ষা মুসলিম বিশ্ব করছিল। আহমদীয়া আন্দোলনের সদস্যগণকে আহমদী মুসলিম বা সংক্ষেপে আহমদী বলা হয়।

✌✌আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামাত এর মতে - মির্যা গোলাম আহমদ একজন মুজাদ্দিদ (সংস্কারক), প্রতিশ্রুত মসীহ্‌, ইমাম মাহদী এবং প্রত্যাবর্তনকারী যীশু খ্রিস্টর পাশাপাশি ইসলামের নবী মুহাম্মদ -এর প্রদর্শিত পথে পাঠানো একজন উম্মতী নবী। তাদের মতে নবুয়াতের সমাপ্তি মানে আর কোন নতুন নবী আসতে পারবেন না - তা নয়; নতুন নবী আসতে পারবেন তবে তিনি হবেন উম্মতী নবী এবং তাকে অবশ্যই হতে হবে নবী মুহাম্মদ যে পথ-প্রদর্শন করে গেছেন সেই পথে। তিনি কোনো নতুন শরীয়ত আনবেন না। অথচ ইসলামী শরিয়াহর মূল রেফারেন্স গ্রন্থ কুরআন ও হাদীসে উম্মতী নবী বলে কোন বিষয় নেই। 

✌✌ইতিহাস সম্পাদনা
উনবিংশ শতকের শেষের দিকে মির্যা গোলাম আহ্‌মেদ নিজেকে একজন সংস্কারক,প্রতিশ্রুত মসীহ্‌, ইমাম মাহদী এবং প্রত্যাবর্তনকারী যীশু খ্রিস্ট হিসাবে দাবী করেন।তিনি বলেন যে তার আগমন হয়েছে ইসলাম কে তার আসল অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে ।তাই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামাতের। ১৮৮৯ সালে মির্যা গোলাম আহ্‌মদ এই সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেন যাকে পরবর্তীতে "আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামাত" নাম দেয়া হয়। ভারতবর্ষে ১৯'শ শতকের দিকে ইসলামের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আহ্‌মদীয়া মুসলিম সম্প্রদায় খ্রিস্টান এবং আর্য সমাজীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।

✌✌বর্তমান অবস্থা
প্রচলিত কোরআন ও হাদিসের বর্ণনার সাথে আহমদীদের মতবাদের ভিন্নতা থাকায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মূলধারার মুসলমানগণ প্রথম থেকেই আহ্‌মদীয়াদের বিরোধিতা করে আসছে। ১৯৭৪ সালে পাকিস্তান সরকার আহ্‌মদীয়াদের অমুসলিম ঘোষণা করে। পাকিস্তানের মত বাংলাদেশ-এর বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোর পক্ষ থেকে আহমদীদের অমুসলিম ঘোষণা করার জন্য আন্দোলন হতে থাকে। ফলে বিভিন্ন সময়ে আহমদী মুসলমানরা বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকেন।

✌✌বিশ্বাস
আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামাত রা বিশ্বাস করে যে আল্লাহ্‌ যীশুকে সশরীরে (জ়ীবন্ত অবস্থায়) বেহেস্তে তুলে নিয়ে যান্‌নি।তিনি এই পৃথিবীতেই স্বাভাবিক মৃত্যবরণ করেছেন এবং মৃত্যুর পর বেহেস্তবাসি হয়েছেন। যীশুর আগমন হবে এবং তা হবে মুহাম্মদ(সঃ)এর উম্মতদের মধ্য থেকে। কেননা যদি ইসলাম ধর্মকে পুনর্গঠনের জন্য বেহেস্ত হতে যীশুকেই পাঠাতে হয় তাহলে মুসলমানরা কি ভূমিকা পালন করবে? যীশুর দায়িত্ব পালন করার জন্য তাই মুসলমানদের মধ্য থেকে উঠে আসবেন কেউ, যিনি ইসলাম ধর্মের পুনর্গঠনের জন্য কাজ করবেন। আর ইনি হলেন মির্যা গোলাম আহ্‌মেদ।

মির্যা গোলাম আহ্‌মেদ নিজে আহমদীদের বিশ্বাসের ব্যপারে বলেছেন,

“আমরা ঈমান রাখি, খোদা তা‘লা ব্যতীত কোন মা‘বূদ নাই এবং সৈয়্যদনা হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্‌র রসূল এবং খাতামুল আম্বিয়া। আমরা ঈমান রাখি, কুরআন শরীফে আল্লাহ্ তা‘আলা যা বলেছেন এবং আমাদের নবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে যা বর্ণিত হয়েছে উল্লিখিত বর্ণনানুসারে তা সবই সত্য। আমরা এ-ও ঈমান রাখি, যে ব্যক্তি এই ইসলামী শরীয়ত থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হয় অথবা যে বিষয়গুলি অবশ্যকরণীয় বলে নির্ধারিত তা পরিত্যাগ করে এবং অবৈধ বস্তুকে বৈধকরণের ভিত্তি স্থাপন করে, সে ব্যক্তি বে-ঈমান এবং ইসলাম বিরোধী। আমি আমার জামা‘তকে উপদেশ দিচ্ছি, তারা যেন বিশুদ্ধ অন্তরে পবিত্র কলেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্’-এর উপর ঈমান রাখে এবং এই ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করে। কুরআন শরীফ হতে যাদের সত্যতা প্রমাণিত, এমন সকল নবী (আলাইহিমুস সালাম) এবং কিতাবের প্রতি ঈমান আনবে। নামায, রোযা, হজ্জ ও যাকাত এবং এতদ্ব্যতীত খোদা তা‘লা এবং তাঁর রসূল (সা.) কর্তৃক নির্ধারিত কর্তব্যসমূকে প্রকৃতপক্ষে অবশ্য-করণীয় মনে করে যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয়সমূহকে নিষিদ্ধ মনে করে সঠিকভাবে ইসলাম ধর্ম পালন করবে। মোট কথা, যে সমস্ত বিষয়ে আকিদা ও আমল হিসেবে পূর্ববর্তী বুজুর্গানের ‘ইজমা’ অর্থাৎ সর্ববাদী-সম্মত মত ছিল এবং যে সমস্ত বিষয়কে আহলে সুন্নত জামা’তের সর্বাদি-সম্মত মতে ইসলাম নাম দেয়া হয়েছে, তা সর্বতোভাবে মান্য করা অবশ্য কর্তব্য। যে ব্যক্তি উপরোক্ত ধর্মমতের বিরুদ্ধে কোন দোষ আমাদের প্রতি আরোপ করে, সে তাকওয়া বা খোদা-ভীতি এবং সততা বিসর্জন দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ রটনা করে। কিয়ামতের দিন তার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ থাকবে, কবে সে আমাদের বুক চিরে দেখেছিল, আমাদের এই অঙ্গীকার সত্বেও অন্তরে আমরা এসবের বিরুদ্ধে ছিলাম”?

(আইয়ামুস্‌সুলেহ্ পুস্তক, পৃষ্ঠা: ৮৬-৮৭)

সুতরাং তুলনা করলে দেখা যায়, সাধারণ সুন্নী মুসলমানদের সাথে আহমদী মুসলমানদের তেমন কোনও মৌলিক পার্থক্য নেই।

✌✌সমালোচনা
পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাবের ৪০ তম আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, [[মুহাম্মদ]] সাঃ সর্বশেষ নবী। কিন্তু কাদিয়ানীরা এটা অস্বিকার করে।

নবী (সাঃ) বলেছেন "আমি শেষ নবী,আমার পরে কোন নবী নেই।"

নবী(সাঃ) আরো বলেছেন, "আমার পরে ত্রিশজন মিথ্যাবাদী নবুয়তের দাবি করবে অথচ আমিই শেষ নবী।"

কাদিয়ানীদের দাবি মতে ঈসা ইবনে মরিয়ম(আ) পুনর্জন্ম নিয়েছে। কিন্তু ইসলামের মতে একজন মানুষ শুধু একবার জন্ম নিবে।

হাদিসে নবী (সাঃ) স্পষ্ট বলেছেন, ঈসা |ঈসা ইবনে মরিয়ম(আ)আকাশ থেকে সরাসরি অবতরণ করবেন সিরিয়ার একটি মসজিদের মিনারায়। তিনি এসে ইমাম মাহদী(যিনি ফাতেমা(রা) বংশের হবেন) তার নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন এবং ইয়াজুজ মাজুজকে ধ্বংস করবেন।

হাদিসে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ইমাম মাহদী এবং ঈসা (আ) দুইজন আলাদা ব্যক্তি হবেন। তাই কাদিয়ানীদের দাবি ভিত্তিহীন বলে মনে করেন সুন্নি মুসলিমরা।

No comments

Thanks for your comments. I will reply you as soon as.